২৩শে আগস্ট '০৯ রবিবার থেকে বাংলায় ওয়েবসাইটে লেখা শুরু .
ভারত এবং বাংলাদেশের সব নাগরিকরাই গুগুলকে ধন্যবাদ জানাতে চাইবেন | এর কারণ কম্প্যুটারে বাংলায় লেখা এবং অনেকগুলি ভারতীয় আঞ্চলিক ভাষাও লিখে যেকোনো ওয়েবসাইটে upload করার জন্য নতুন সুবিধে করে দিয়েছে |
Google-এ 'indic transliteration Labs' সাইটটা খুলে ইংরিজিতে লিখলে কিরকম বাংলা হরফে পাল্টে যায় তা পরখ করুন |
English'এ আধুনিক পদ্ধতির শিক্ষাদান শুরু হয়েছিল কলকাতা তথা বঙ্গদেশেই | তখন ইংরিজিতে মনের ভাব প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকলেই ব্রিটিশ সরকার চাকরি দিতেন | প্রধানতঃ ’রেকর্ড’ অর্থাত নথি নকল করার কাজ; এঁদের 'কেরানিবাবু' বলত | ভাল ভাবে ইংরিজি ব্যবহার করার ক্ষমতা থাকলে চাকরির পদ, মাইনে ও অন্যান্য সুবিধাদিও তুলনায় বেশী হত | তাঁদের সমাজে প্রতিষ্ঠাও বেড়ে যেত | এরই ফলে কলকাতায় ইংরিজি তাডাতাডি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল | পৃথিবীতে ফরাসী পর্তুগিজ ডাচ জার্মান জাপানি চীনি প্রভৃতিদের তুলনায় বেশী দেশের ওপরে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে ব্রিটিশরা সফল হয়েছিল | এইজন্য ঐসব দেশেও ইংরিজি চালু হতে অর্থাত ইংরিজিতে শিক্ষাদান প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হতে বেশি সময় লাগেনি |
মাননীয় থমাস ব্যাবিংটন মেকলে (লর্ডমেকলে) ২রা ফেভ্রুয়ারী ১৮৩৫ সালে ভারত তথা সমস্ত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে ইংরিজিতে শিক্ষাদান ব্যবস্থা চালু করার জন্য একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন এবং লর্ড বেন্টিন্ক এই প্রস্তাবে পূর্ণ সন্মতি দিয়েছিলেন |
এরপর থেকে পরম্পরাগত শিক্ষাদান ব্যবস্থা ধীরে ধীরে রদ করে আধুনিক পদ্ধতির ইংরিজিতে শিক্ষাদান ব্যাবস্থা চালু হয়েছিল | ওই প্রতিবেদনটি পুরোটা পড়ার জন্য ক্লিক করুন - Minute of MeCaulay . ওই প্রতিবেদনের মূললক্ষ্যটি ৩৪ নাম্বার পরিচ্ছেদে লেখা আছে, নিচে যেটা লাল রং-এ আন্ডারলাইন দেওয়া এবং বোল্ড করা আছে | --
[34] In one point I fully agree with the gentlemen to whose general views I am opposed. I feel with them that it is impossible for us, with our limited means, to attempt to educate the body of the people. We must at present do our best to form a class who may be interpreters between us and the millions whom we govern, --a class of persons Indian in blood and colour, but English in tastes, in opinions, in morals and in intellect. To that class we may leave it to refine the vernacular dialects of the country, to enrich those dialects with terms of science borrowed from the Western nomenclature, and to render them by degrees fit vehicles for conveying knowledge to the great mass of the population.এরপর থেকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সব জায়গাতেই কিন্ত আঞ্চলিক ভাষা চর্চা করার ব্যাপারে ভাঁটা পডতে শুরু করে | যেহেতু শুধুমাত্র আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারী চাকরি পাবার সুযোগ মিলতনা এবং তা ব্রিটিশ শাসকদের দেশশাসনের ব্যাপারে খুব একটা কাজেও লাগতনা | এছাড়াও সামাজিক গুরুত্ব না-বাডার কারণে এবং শিক্ষিত হিসাবে গৌরব ও অর্থ উপার্জনের সুযোগ কমে যেতে থাকার দরুণ স্থানীয ভাষা চর্চা করার আগ্রহও থাকতনা |
আজ হয়ত: অনেকেরই জানা নেই যে প্রেসিডেন্সি কলেজ'এ ভর্তি হওয়ার যোগ্যতার পরীক্ষায পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়কেও (২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৮২০ থেকে ২৯শে জুলাই, ১৮৯১) অযোগ্য বলে প্রেসিডেন্সি কলেজ গণ্য করেছিল | সংস্কৃত ভাষা শেখা সহজ করতে ‘ব্যাকারণ কৌমুদী’, সংস্কৃত ভাষার ব্যাকারণ বই এবং বাংলা পডতে এবং লিখতে শেখার জন্য ‘বর্নপরিচয়’ও বিদ্যাসাগর মহাশয় লিখেছিলেন | ওঁনার ঐসব প্রয়াস বর্তমানে কতদুর সাফল্যলাভ করেছে তা নিয়ে এখন বিতর্ক হতেই পারে |
বাংলা ভাষার ব্যাকারণ বই-ও নাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড-এর (১৭৫১ - ১৮৩০) তৈরী | অন্যান্য প্রায় সব আঞ্চলিক ভাষার ব্যাকারণ বইও ব্রিটিশরাই তৈরি করেছিল |
আঞ্চলিক ভাষা লেখার জন্য যদিও অনেক সফটওয়ার আছে কিন্তু একমাত্র গুগুল দিয়েই ভারতের আঞ্চলিক ভাষাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগ অক্ষর সরাসরি কম্পুটার দিয়ে ওয়েবসাইটে লেখার সুযোগ এতদিন পর পাওয়া গেল৷ এই সুযোগ কাজে লাগবে যদি ইংরিজি বইগুলোর অনুবাদ এবং তর্জমা স্থানীয় ভাষায় লিখে সেগুলো কম্পুটার দিয়ে বিভিন্ন ওয়েবসাইট'এ আপলোড করে সকলের অর্থাত সাধারণ মানের লেখা-পড়া জানা মানুষেরও নাগালের মধ্যে এনে দেওয়া যায়। ভারতীয় জ্ঞান বিজ্ঞান সাহিত্য প্রভৃতি বিষয় যথেষ্ঠ গভীর এবং প্রাচীন হলেও এইসব বিষয়ের পাণ্ডলিপির উপযুক্ত সংরক্ষনের অভাবে এগুলোর অস্তিত্ব টিঁকিয়ে রাখা নিয়েই সংকট দেখা দিয়েছে। এসব নিয়ে এখন চর্চা করার সময় প্রায় কারুরই নেই। চর্চা করে লাভও নেই কারণ চাকরি মেলেনা। তাছাড়া আঞ্চলিক ভাষা কম্প্যুটারে লিখতে চাইলে ইংরিজিতে জ্ঞান থাকা আবশ্যিক। যেকোনও স্থানীয় ভাষাই কম্প্যুটারে লেখার ও পড়ার সুবিধে হবে যদি স্থানীয় সব ভাষার বর্ণমালার অক্ষরগুলোর নির্দিষ্ট বিকল্প রোমান অক্ষর-এ করে নেওয়া হয়। এজন্য খুব গভীর জ্ঞানেরও দরকার হবেনা, যা দরকার -- তা হল কেবল ভারতীয়দের সদিচ্ছা এবং পণ্ডিত মানুষদের সহমত ও সন্মিলিত প্রচেষ্টা। এমনিতে প্রায় সব অক্ষরেরই রোমান বিকল্প চালু আছে, কয়েকটি বাদে, যেমন - ‘ট’ এর বিকল্প বড়হাতের T, ‘ঠ’ এর বিকল্প Th ; 'ড়' এর বিকল্প বড়হাতের R ধরা যেতে পারে। তেমনই 'ঢ়' এর বিকল্প Rh এবং 'ড' এর বিকল্প D ও 'ঢ' এর বিকল্প Dh ধরা যেতে পারে। চন্দ্রবিন্দুর বিকল্প চিহ্ন ^ ধরা যেতে পারে। একবার এইভাবে লেখা এবং পড়ায় অভ্যস্থ হয়ে গেলে তখন যেকোনও আঞ্চলিক ভাষাই পড়তে শেখাও সহজ হবে।